বেহাল পয়োঃনেটওয়ার্ক, বুড়িগঙ্গায় পড়ছে মানববর্জ্য

  • Author: _bd_fsm_bd_fsm
  • Published: December 3, 2022 - 7:02 pm
  • Updated: December 3, 2022 - 7:05 pm

পাগলা পয়োঃনেটওয়ার্ক শোধনাগারের ক্যাচমেন্ট এরিয়া ৭৩ বর্গ কিলোমিটার। এই পয়োঃনেটওয়ার্কটি ৩৫ বছরের পুরনো। বর্তমানে এই নেটওয়ার্কের আওতায় বসবাসরত বিপুল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান পয়োঃনেটওয়ার্কটি অপ্রতুল ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি প্রতিদিনই ভেঙ্গে পড়ছে। বর্জ্য উপচে পড়ে (ওভারফ্লো) স্বাস্থ্য সম্মত বসবাসে সমস্যা সৃষ্টি করছে।

 

পয়োঃনেটওয়ার্কের মাধ্যমে মাত্র ৪০ শতাংশ পয়োঃবর্জ্য শোধন করা সম্ভব হচ্ছে। অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ মানববর্জ্য মিশছে বুড়িগঙ্গায়।

বিভিন্ন জায়গায় পয়োঃনেটওয়ার্ক ভেঙ্গে পড়া এবং ওভারফ্লো করার মাধ্যমেও বুড়িগঙ্গা নদীতে পয়োঃনিষ্কাশিত হচ্ছে বলে জানায় ঢাকা ওয়াসা। বুড়িগঙ্গার পানিতে প্রতিনিয়ত মিশছে এসব মানববর্জ্য।
 
এর পাশাপাশি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০টি জায়গায় বুড়িগঙ্গার পানিতে নানা ধরনের বর্জ্য মিশছে বলে ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে।

 

অন্যদিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাগলা পয়োঃনেটওয়ার্ক শোধনাগারের লাইন অনেক স্থানে ভেঙ্গে পড়ায় এবং ওভারফ্লো করায় মানববর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পড়ছে। এখন বুড়িগঙ্গাকে রক্ষার্থে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিবেশ কমিটি পাগলা পয়োঃশোধনাগারটি দ্রুত সময়ে সর্বোচ্চ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে ঢাকা ওয়াসা বরাবর চিঠি দিয়েছে। একই সঙ্গে বুড়িগঙ্গার দূষণরোধে পয়োঃশোধনাগারটির সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে অনুরোধ করা করা হয়েছে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিবেশ কমিটি ২০০৯ সালের তৃতীয় সভার সিদ্ধান্ত ঢাকা ওয়াসা বরাবর দিয়েছিল পাগলা পয়োঃশোধনাগারটির দ্রুত পুনর্বাসন করে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে। এরপরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ঢাকা ওয়াসা।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (পরিবেশ শাখা-৩) রোকসানা তারান্নুম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ওয়াসাকে অনুরোধ করেছিলাম ২০০৯ সালে। পাগলা পয়োঃশোধনাগার যেন শতভাগ ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। এটা না করায় বুড়িগঙ্গায় মানববর্জ্য পড়ে দূষণ বাড়ছে। এতে করে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব বেড়েই চলেছে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহরের ৩ হাজার ৪৬১ কিলোমিটার পানির লাইন রয়েছে। এর বিপরীতে ৯১৬ কিলোমিটার পয়োঃলাইন রয়েছে। ফলে ঢাকা শহরের পয়োঃব্যবস্থাপনার সমস্যা বেড়েই চলেছে। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় পয়োঃসিস্টেম বলে আসলে কিছু নেই। এছাড়া যেসব এলাকায় পুরাতন পয়োঃনেটওয়ার্ক বিদ্যমান রয়েছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পুরণের জন্য তা অপ্রতুল। ফলে বাসাবাড়ি, শিল্প কারখানার পয়োঃবর্জ্য বুড়িগঙ্গায় মিশছে।

বিশেষ করে ৫ দশমিক ৩৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দ্রুত সময়ে পয়োঃনেটওয়ার্ক স্থাপন করা জরুরি। এসব স্থানে সুয়ারেজ লাইন ভেঙ্গে পড়ায় বুড়িগঙ্গায় পড়ছে বর্জ্য। কোতোয়ালী, লালবাগ, সূত্রাপুর, ডেমরা, মতিঝিল, শ্যামপুর ও রমনা এলাকায় পয়োঃনেটওয়ার্ক পুনর্বাসন করা জরুরি।

বুড়িগঙ্গায় মানববর্জ্য-দূষণ ঠেকাতে এবং স্বাস্থ্যসম্মত পয়োঃনেটওয়ার্ক স্থাপনে ৭২ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার পয়োঃলাইন নির্মাণ করা জরুরি। যাতে করে বাড়তি এলাকায় পয়োঃলাইন পুনর্বাসন করা যায়। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক।
 
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গায় মানবর্জ্য নিষ্কাষণ রোধে দুটি স্যুয়ারেজ জেটিং মেশিন, ১১টি স্যুয়ার পাম্প, ৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস কানেকশন, সাড়ে ৮ হাজার ম্যানহোল এবং ২৫ হাজার ফুট স্টেপ কেনা জরুরি। এর পাশাপাশি ৭৩ কিলোমিটার সুয়ারেজ লাইন পুনর্বাসন, আরমানিটোলা, ধোলাইখাল ও নবাবগঞ্জে সুয়ার লিফট স্টেশন পুনর্বাসন করা জরুরি। এর পাশাপাশি পয়োঃনিষ্কাশনে তিনটি ইলেকটিক্যাল সাব স্টেশন ও ৮৩ কিলোমিটার স্যুয়ার লাইন পরিষ্কার করা জরুরি।  

পয়োঃনেটওয়ার্ক স্থাপন করে বুড়িগঙ্গায় মানববর্জ্য নিষ্কাষণ রোধে ২১২ কোটি টাকা টাকা প্রয়োজন বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটা ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব)পাঠিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।

এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে পাওয়া যায়নি।
আরবানাইজেশন টাস্কফোর্সের তথ্যমতে, বস্তিবাসীদের শারীরিক অবস্থা অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় অত্যন্ত খারাপ। পয়োঃবর্জ্যের মাধ্যমে সৃষ্ট পানি দূষণই তাদের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *